Powered By Blogger

Friday, May 28, 2021

তুঙ্গভদ্রার তীরে

                                                                              




                                                                                                                প্রথম পর্ব

 

        অক্টোবরের 24 তারিখ রাতে হাম্পি এক্সপ্রেসে রওনা হলাম মধ্য কর্ণাটকের হসপেটের উদ্দেশ্যে। গন্তব্য প্রাচীন বিজয়নগর রাজ্যের ধ্বংসপ্রাপ্ত রাজধানী হাম্পি।

        রামায়ণের কিষ্কিন্ধা নগরী,বালি সুগ্রীবের সাম্রাজ্য এই তুঙ্গভদ্রা নদীর তীরে এই অঞ্চলে ছিল বলেই কথিত। হাম্পি নামটি এসেছে পম্পা বা পম্পাপতি নাম থেকে। পম্পা পার্বতীর অপর নাম। এখানেই পম্পা বা পার্বতী পতি রূপে শিবকে পাবার উদ্দেশ্যে শিবের তপস্যা করেন এবং বিরূপাক্ষ রূপে শিবকে বিবাহ করেন। খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতকে দক্ষিণাত্যে মুসলমান সাম্রাজ্য বিস্তার প্রতিহত করতে হরিহর ও বুক্কা নামের সঙ্গম বংশীয় শাসকদের হাতে বিজয়নগর রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়। বিজয়নগরের রাজধানী ছিল হাম্পি শহর।  দীর্ঘ দুই শতকেরও বেশী সময় ধরে বিজয়নগর ছিল দক্ষিণ ভারতের প্রধান রাজ্য যার সীমানা কৃষ্ণা নদীর অববাহিকা থেকে দক্ষিণে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ ছিল। বিদেশী পর্যটকদের বর্ণনা থেকে জানা যায় ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম ভাগে হাম্পি ছিল ভারতের অন্যতম বৃহৎ ও সমৃদ্ধ নগরী। রাজা কৃষ্ণদেব রায়ের আমলে বিজয়নগর উচ্চতার চরম শিখরে পৌঁছোয়। তাঁর স্থাপিত সৌধগুলির ধ্বংসাবশেষ আজও সেই সমৃদ্ধির চিহ্ন বহন করে চলেছে। 1665 তে তলিকোটার যুদ্ধে বাহামনি সুলতানদের কাছে পরাজয়ে বিজয়নগরের পতন হয়। তাদের হাতে হাম্পি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।

        1800 খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মী কর্নেল ম্যাকেঞ্জি প্রথম এই ধ্বংসস্তূপের সন্ধান পান ও এক সার্ভে ম্যাপ তৈরি করেন। পরবর্তীতে পুরাতত্ত্ব বিভাগের ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় প্রাচীন এই সৌধগুলি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের প্রচেষ্টা করা হয়। বর্তমানে ইউনেস্কো হাম্পিকে ঐতিহ্যবাহী স্থান  (World Heritage Site) হিসেবে ঘোষণা করেছে।


        সকাল সকাল হসপেটে পৌঁছে গাড়ি নিয়ে হাম্পি পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় নটা বেজে গেল।  গেস্ট হাউসে একটু ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম হাম্পি দর্শনে। সমগ্র হাম্পি উঁচু নিচু অসমতল ও ছোট ছোট পাহাড়ঘেরা। হাম্পি বাজারের রাস্তা দিয়ে বিরূপাক্ষ মন্দিরের দিকে এগিয়ে চলি। রাস্তার দুই পাশে সারি সারি একতলা ও দোতলা দোকানের ভগ্নাবশেষ। এই বাজারের নাম ছিল বিরূপাক্ষ বাজার, সে সময়ের সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী বাজার। হীরে মানিক, রেশম ও ঘোড়া বেচাকেনার প্রধান কেন্দ্র ছিল এই বাজার। সামান্য এগিয়ে বিরূপাক্ষ মন্দির। মন্দিরের সুদৃশ্য নয়তলা গোপুরোম লম্বায় প্রায় 170 ফিট। এই মন্দিরটি হামপির তথা দক্ষিণ ভারতের প্রাচীনতম মন্দির যেখানে আজও পূজাপাঠ হয়। আনুমানিক 800 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত এই মন্দিরের সংস্কার করেন রাজা কৃষ্ণদেব রায়। সামনে বড় চত্বরের দুই পাশে রন্ধনশালা ও অতিথিশালা।  সামনে একটি তিন মুখযুক্ত নন্দী মূর্তি।সামনে গর্ভগৃহে বিরূপাক্ষ শিবলিঙ্গ। গর্ভগৃহের সামনে কল্যাণমণ্ডপ। অসাধারণ কারুকার্য। মণ্ডপের ছাদে ফ্রেস্কো চিত্রকলায় পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারতের নানা কাহিনী বর্ণিত। মন্দির চত্বরে আরো কয়টি মন্দির আছে। মন্দিরের এক পাশে চতুষ্কোণ পুষ্করিনী মন্মথ হান্ডা। এর পাশ দিয়ে পথ গিয়েছে তুঙ্গভদ্রা নদীর ঘাটে।

বিরূপাক্ষ মন্দির​
বিরূপাক্ষ মন্দিরের ছাদের অপূর্ব কারুকার্য​

                                   

বিরূপাক্ষ মন্দিরের ছাদের অপূর্ব কারুকার্য​
                                             



 
হাম্পি বাজার

মন্মথ হান্ডা


        বিরূপাক্ষ মন্দির দেখার পর​ গাড়ি এগিয়ে চলে পরবর্তী গন্তব্যের দিকে । দুটি মনোলিথিক গণেশ -- সসিভিকালু গণেশ ও কাদলেকালু গণেশ দেখে একে একে দেখে নিলাম বারাভিলিঙ্গম ও মনোলিথিক উগ্রনরসিংহ মূর্তি। পরবর্তী গন্তব্য বালকৃষ্ণ মন্দির। বিজয়নগরের রাজা কৃষ্ণদেব রায় 1613 খ্রিস্টাব্দে কলিঙ্গ বিজয়ের স্মারক হিসাবে এই মন্দির তৈরি করেন। মূল মন্দিরের দেয়ালে মহাকাব্যের নানা ঘটনা খোদাই করা। মন্দিরের থাম ও দরজগুলিও অনবদ্য কারুকার্য মন্ডিত। এই মন্দিরে কোন বিগ্রহ নেই। মূর্তিটি বর্তমানে চেন্নাই জাদুঘরে সংরক্ষিত। 


সসিভিকালু গণেশ

সসিভিকালু মন্দির চত্বর থেকে বিরুপাক্ষ মন্দির

বালকৃষ্ণ মন্দির
উগ্রনরসিংহ
বারাভিলিঙ্গম

কাদলেকালু গণেশ






        এর পর দেখলাম কমলপুরায় পুরাতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা। খননকার্যে পাওয়া সেই আমলের নানা মূর্তি সংরক্ষিত হচ্ছে এখানে। এ ছাড়াও রয়েছে 1856 সালে কর্নেল আলেক্সান্ডার গ্রিনল -এর তোলা হাম্পির নানা সৌধের ধ্বংসাবশেষের ছবি। সংগ্রহশালা থেকে বেরিয়ে সামনেই  বিখ্যাত পান সুপারি বাজার। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস থেকে উঠে আসে চোখের সামনে।


কমলপুরায় পুরাতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা




পান সুপারি বাজার​

                                       



        এরপর গেলাম জেনানা এনক্লোসারে। উঁচু প্রাচীর ঘেরা এই জায়গায় রয়েছে রানীদের প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ। আর আছে একটি স্নানাগার ও পদ্মের আকারের লোটাস মহল। একটু দূরে আছে ইসলামী স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত হাতিশালা। একটু দূরে রয়েছে রানীদের স্নানাগার Queen's Bath.   একটু দূরে আরেক অসাধারণ শিল্প শোভিত হাজার রাম মন্দির। মন্দিরের গায়ে খোদাই করা রামের জীবনের নানা কাহিনী। আর মন্দিরের কালো গ্রানাইট পাথরের থামে অনবদ্য কারুকার্য । 


জেনানা এন্ক্লোজারের নজর মিনার

রানীদের প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ

লোটাস মহল
Queen's Bath

হাতিশালা
                                         

হাজার রাম মন্দির

মন্দিরের কালো গ্রানাইট পাথরের থামে কারুকার্য 


        রাজবাড়ী এলাকা থেকে বেরিয়ে ক্ষনিকের যাত্রা বিরতি, মধ্যাহ্নভোজের।


                                                                                                               দ্বিতীয় পর্ব


মধ্যাহ্নভোজ সাঙ্গ করে আবার বেরিয়ে পড়া। এবার গন্তব্য হাম্পির উত্তরভাগে তুঙ্গভদ্রার পাড়ে অন্যতম আকৰ্ষণ বিজয় বিটঠল মন্দির। হাম্পির মন্দিরগুলোর মধ্যে স্থাপত্য ও ভাস্কর্যে অন্যতম সেরা। বিজয়নগরের রাজা দ্বিতীয় দেব রায়ের আমলে, 1422 থেকে 1446 এর মধ্যে এই মন্দির স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে রাজা কৃষ্ণদেব রায় এই মন্দিরের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করেন।


বিজয় বিঠ্ঠল মন্দিরের তোরণ​



          মন্দিরের 800 মিটার আগে গাড়ি রেখে ব্যাটারি চালিত গাড়িতে উঠে বসলাম। সংকীর্ণ লালমাটির পথ ধরে গাড়ি এগিয়ে চললো মন্দিরের পানে। পথে কয়টি পাথরের ধ্বংসাবশেষ ও পুষ্করিনী। এর পর সারি সারি পাথরের ঘরের মত। জানতে পারলাম এটি হল বিটঠল বাজার। সে সময়ের ঘোড়া বেচাকেনার প্রধান কেন্দ্র। সামনে উঁচু প্রাচীর ঘেরা মন্দিরের তিন দিকে তিনটি গোপুরম। মন্দির চত্বরটি বিশাল। সামনে কয়েকটি মণ্ডপ। এগুলি হল  গর্ভগৃহে, সভা মণ্ডপ, উৎসব মণ্ডপ, কল্যাণ মণ্ডপ ও রঙ্গমণ্ডপ। প্রতিটি মণ্ডপের কারুকার্য বিস্ময়কর। বর্ণনার ভাষা জানা নেই। গর্ভগৃহে অবশ্য কোন বিগ্রহ নেই। কল্যাণ মণ্ডপটি বিবাহস্থল। আর রঙ্গমণ্ডপটির দেয়ালে ছাদে ও থামগুলির কারুকার্য অসাধারণ। এই মণ্ডপে 56 টি হাম অছে যেগুলোর গায়ে নানা বাদ্যযন্ত্র খোদাই করা। এই থামগুলির গায়ে আঙুল দিয়ে মৃদু আঘাত করলে সাত সুর বেজে ওঠে। সত্যিই বিস্ময়কর। যদিও এই মণ্ডপে এখন প্রবেশ নিষিদ্ধ। আমাদের গাইড পাশের একটি মণ্ডপের একটি থামে এই আওয়াজ শুনিয়েছিলেন ।


বিজয় বিঠ্ঠল মন্দির

মন্দিরের​ musical pillar

মন্দিরের নাটমন্দিরের থামে কারুকার্য



          বিটঠল মন্দিরের আরো একটি আকর্ষণ হল মন্দির চত্বরে রাখা পাথরের তৈরি রথ (এই রথের ছবি আমরা নতুন পঞ্চাশ টাকার নোটের পেছনে দেখতে পাই)। শোনা যায় রাজা কৃষ্ণদেব রায় উৎকল বিজয়ের সময় কোনারকের রথ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে এই রথ নির্মাণ করিয়েছিলেন। অসাধারণ কারুকার্য মন্ডিত এই রথে আসীন গরুড়, বিষ্ণুর বাহন। রথের চাকাগুলি ঘুরতো, কিন্তু বর্তমানে পুরাতত্ত্ব বিভাগ সিমেন্ট দিয়ে স্থির করে দিয়েছে,কিছুটা পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে, কিছুটা বা সংরক্ষণের। রথের বহন ছিল দুটি ঘোড়া, কিন্তু আজ তাদের অস্তিত্ব নেই। পুরাতত্ত্ব বিভাগ সামনে দুটি হাতির মূর্তি বসিয়ে দিয়েছে। এই রথের চূড়াটি বর্তমানে ভেঙে গেছে (1856 তে কর্নেল আলেক্সান্ডার গ্রিন লর তোলা ছবিতে কিন্তু রথের চূড়া দেখা যায়, ছবিটা দিলাম)।

বিঠ্ঠল মন্দিরের বিখ্যাত রথ​

কর্ণেল আলেক্সাণ্ডার গ্রীনল​- এর অলোকচিত্রে রথ​

                                       

মন্দির থেকে বেরিয়ে বাঁ দিকের পথ ধরে এগোলে বাঁ হাতে দেখা যাচ্ছে একটি বিষ্ণু মন্দির। আরেকটু এগিয়ে কয়েকটি বিশ্রামাগার, আর সামনে একটি তোরণ। এই তোরণের সামনের পায়ে চলা পথটি চলে গিয়েছে বিরূপাক্ষ মন্দিরের দিকে। আর তোরণের ঠিক সামনে রয়েছে পাথরের তৈরি  King's balance,  যেখানে বিভিন্ন উৎসবের সময় মহারাজ তুলাদণ্ডের সাহায্যে নিজের ওজনের সম পরিমাণ মণি মানিক্য মন্দিরের পুরোহিতদের দান করতেন।


বিষ্ণু মন্দির​

King's balance


        প্রথম দিনের সফর শেষে এবার গেস্ট হাউসে ফেরার পালা। রুক্ষ পাথুরে পাহাড়ের মাঝে মাঝে কিছু সবুজের দর্শন মেলে। উঁচু নিচু পথ ধরে ফেরার পথে একটু থামলাম সসিভিকালু গণেশ মন্দিরের সামনে। অস্তমিত সূর্যের শেষ আলো মন্দিরের থামগুলির পেছন দিয়ে চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। ধীরে ধীরে সূর্যদেব মেঘের আড়ালে হারিয়ে গেলেন। আমরাও ক্লান্ত পদে ফিরে এলাম গেস্ট হাউসে।


          ধীরে ধীরে আধাঁর নেমে আসে হাম্পির বুকে। চারিদিক নিস্তব্ধ হয়ে গেল আসে পাশে কোন জনবসতি নেই। দূরে বিরূপাক্ষ মন্দিরের আলো দেখা যাচ্ছে। মন্দিরের মন্ত্র ধ্বনি ভেসে আসছে। রাত বাড়ে। মন্ত্র থেমে যায়। ভোজন সম্পন্ন করে ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিই নরম বিছানায়।


                                                                             



                                                                                                                  তৃতীয় পর্ব


          পরের দিন খুব ভোরবেলা ঘুম ভেঙে গেল। উদ্দেশ্য মাতঙ্গ পাহাড়ের ওপর উঠে সূর্যোদয় দেখা। হাম্পির পূর্ব দিকে এই পাহাড়ই এখানকার উচ্চতম বিন্দু। উপরে মাতঙ্গ শিবের মন্দির আছে। কিন্তু বিধি বাম। আকাশের মুখ ভার। কাজেই মাতঙ্গ পাহাড় অভিযানের আশা ত্যাগ করে কিছু পরে বেরোলাম বিরূপাক্ষ মন্দিরের পানে। পাশ দিয়ে পায়ে চলা পথ ধরে মন্মথ হান্ডার পাশ দিয়ে রাস্তা চলে গেছে নদীর পাড়ে। সকলেই অনেক মানুষের সমাগম। অনেকে স্নান করছে, কাপড় কাচছে। নদীতে ভালোই জল। গত সপ্তাহে বৃষ্টির কারণে বাঁধ থেকে জল ছেড়েছে। স্রোত​ও ভালোই। তাই প্রশাসন থেকে নৌপরাপার বন্ধ রাখার নির্দেশ আছে। 

তুঙ্গভদ্রা নদীর ঘাটে



          এদিক ওদিক ঘুরে হেমকূট পাহাড়ের পথে খানিকটা ঘুরে ফিরে এলাম আস্তানাতে। প্রাতরাশ করে বেরোনোর প্রস্তুতি। আজ যাব রামায়ণের কিষ্কিন্ধা রাজ্যের দিকে। রুক্ষ্ম পাথুরে রাজ্য ছেড়ে এবার সবুজের রাজত্ব। তুঙ্গভদ্রার সেতু পেরিয়ে ও পারে আনাগুন্ডি। এটিই রামায়ণের কিষ্কিন্ধা। প্রথমে পৌঁছলাম অঞ্জনীয় পাহাড়ে। কথিত এটি হনুমানের মা অঞ্জনী দেবীর বাসস্থান। হনুমানের জন্মও এখানেই। তবে এ ব্যাপারে মতান্তর আছে। খাড়া পাহাড়। ছয় শো সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠলাম। ওপরে একটি মন্দির আছে। অনেক স্থানীয় লোকের আনাগোনা। ওপর থেকে তুঙ্গভদ্রার অববাহিকার দৃশ্য অত্যন্ত মনোরম।

তুঙ্গভদ্রার অববাহিকা

অঞ্জনীয় পাহাড়


          এরপর পাহাড়ের ওপর এক দুর্গা মন্দির দেখে পৌঁছলাম পম্পা সরোবর। তিনদিকে পাহাড় ঘেরা ছোট এক চতুষ্কোণ সরোবর। কথিত, পম্পা দেবী (পার্বতী) শিবকে স্বামী হিসেবে পাওয়ার জন্য এই সরোবরের ধরে বসে তপস্যা করেছিলেন। এই কারণে পম্পা সরোবর এক অত্যন্ত পবিত্র স্থান। সরোবরের তীরে মা লক্ষ্মীর মন্দির। এর পর এক একে দেখে নেওয়া অনাগুন্ডি র কয়টি জায়গা, তুঙ্গভদ্রা নদীর তীরে রামচন্দ্রের গুহা, বালী বধের স্থান, ইত্যাদি। এগুলি দেখে ফেরা তুঙ্গভদ্রার দক্ষিণ পাড়ে, হাম্পির দিকে। দেখে নেওয়া হল মাল্যবন্ত পাহাড়ের ওপর ষোড়শ শতকে নির্মিত রঘুনাথ মন্দির।


পম্পা সরোবর

রঘুনাথ মন্দির


          মধ্যাহ্নভোজ শেষে আবার এগোলাম Royal Enclosure এর দিকে। এখানেই ছিল রাজপ্রাসাদ ও রাজ পরিবারের বাস। চারিদিক ছিল দুই স্তরে উঁচু প্রাচীরে ঘেরা। ঢোকার মুখে খিলান দেওয়া পাথরের দরজা। যার অবশিষ্ট পড়ে রয়েছে মাটিতে। ভেতরে ছোট বড় সব মিলিয়ে প্রায় 45 টি সৌধ ছিল। আজ যা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে সুলতানি আক্রমণে। ঢুকেই বাঁ দিকে একটি উঁচু ত্রিস্তর platform,  যার নাম মহানবমী  ঢিব্বা। এখান থেকেই মহারাজারা দশেরার অনুষ্ঠান দেখতেন। এর গায়ে হাতী, ঘোড়া প্রভৃতির শোভাযাত্রা খোদাই করা। কাছেই সাধারণের স্নানাগার ও পাশে একটি সুন্দর stepped tank। পাঁচটি স্তর যুক্ত এই জলাশয় প্রায় সাত মিটার গভীর এক পাশে পাথরের জল বাহিকা যুক্ত। শুনলাম, সেই সময় হাম্পির জল সরবরাহের সুবন্দোবস্ত। ছিল।


মহানবমী  ঢিব্বা

সাধারণের স্নানাগার

মহানবমী ঢিব্বার গায়ে কারুকার্য​

Royal Encloser ধ্বংশাবশেষ একনজরে

Stepped tank


          বেড়ানোর পর্ব মোটামুটি শেষ। বেলাও গড়িয়ে এসেছে। ফেরার পথে দেখলাম জন ভোজনশালা। সারি সারি স্লেট পাথরের থালা দুই স্তরে সাজানো, মধ্যিখানে পরিখা, জল সরবরাহের। ভারী সুন্দর ব্যবস্থা।

ভোজনশালা



সুউচ্চ মাতঙ্গ পাহাড়


          গেস্ট হাউসে মালপত্র গুছিয়ে বেরোনোর প্রস্তুতি সারা। খোলা আকাশের নিচে চা নিয়ে বসেছি। আকাশের পানে তাকিয়ে দেখি অপরূপ এক রামধনু,আমাদের বিদায় জানাতে উপস্থিত। 


          গাড়ি এগিয়ে চলে হসপেট শহরের পানে। পাহাড়ের বাঁকে হারিয়ে গেল বিজয়নগরের ইতিহাস।দূরে মাতঙ্গ পাহাড় আর ছোট বড় কয়টি টিলা ধীরে ধীরে হারিয়ে গেল দূর দিগন্তে।